মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

ক্রিকেট-কীট

প্রকাশিত: ০২:১৬, ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫০

খেলা দেখার তীব্র নেশা; আমরা ক্রিকেট-কীট নাকি—
ছেলেবেলায় মেজ্কা’ ধরে দিয়েছিলেন পিট্না কী!
ছোট্কা’ শুনে আগুন; বলেন, ‘বাড়ির কোন বিটলার-ই
আজ থেকে ছোটদের ওপর চলবে না তার হিটলারি;
বইয়ের পোকার চাইতে বরং ক্রিকেট-কীটের মন তাজা।’
ভেস্তে গেল ছোটদেরকে ঘায়েল করার পন্থা যা!
পড়শি, যারাও আমাদেরকে ভাবত বখা কীট-কিড়ি
বন্ধ হলো আড়-চাহনি, সকল প্রকার টিটকিরি।
তখন থেকেই ছোট্কা’! পেয়ে উনার মধুর আশকারা
আলোবাতাস পেয়ে ঝাড়ে হলাম ডাটো বাঁশ খাড়া।

ছোট্কা’ ক্রিকেট পাগল; সোনা-সোহাগার এই বেশ মিলন
হাটখোলা তার ঘর বারান্দা, সবুজ ঘাসের রেশমি লন
দেশ কখনো জিতলে খেলায় ছোট্কা’ বলেন, ‘মার খাসি’
ড্রাম গিটারের সঙ্গে বাজে কঙ্গ ঢোল ও পার্কাসি।

পড়শি-দেশে পাঁচ অক্টোবর দুই সহস্র তেইশে দিন
আইসিসি মেন্স বিশ্বকাপের বাজল মাদল এই সেদিন
খেলতে গেছে লালসবুজে সোনার ছেলে বাংলা মা’র
নাচছে ঢাকা-র রাম ও রহিম, দূর পাহাড়ে খাং লামা-র
ছোট্কা’ চেঁচান, ‘শাবাশ বাঘা, শাণ দিয়ে নে হার্পুনে
হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, ধর্মশালা আর পুনে
জয় করে আন কাপ-তিমিটা, আর কিছু নেই বলবারই
মন-আকাশে মেঘে মেঘে দে জাগিয়ে দোল ভারি!’

আমরা চেঁচাই, ইচ্ছেমতো করি খেলার বিশ্লেষণ
যেমনটি হয় চিকন খড়ে মিশলে খড়ি, মিশলে শণ
ছোট্কা’ তবে দারুণ বলেন যুক্তি জ্ঞানের সার খুঁটে’
ছিলেন বটে এককালে এক সেরা ব্যাটার, মারকুটে!

বলল মিঠু, ‘ছোট্কা’, বলো, আইসিসি কাপ জিতবে কে?’
হাহ্ হা হেসে কাকা বলেন, ‘গাচ্ছে নানান গীত ভেকে
ক্রিকেটটা তো এক ধরনের আরবি ঘোড়ার ডার্বি খেল
রোদদুপুরের কাছে ঠিকই হারবে চমৎকার বিকেল
অনেক সময় জয়ের দেখা বাঁশের আগে কঞ্চি পায়
হয়তো বা সেই কঞ্চিচিকন পড়ে আছে কোন চিপায়!’

একটা কিছু ভাবছে কাকা, পড়ল কথার ঢিল লিটুর,
‘আহমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, ধর্মশালা, দিল্লি ট্যুর
তোমার প্ল্যানে থাকলে কাকা সেটাই হতো জোশ ভারি;
করলে না তা! ইচ্ছে হয় না তোমার ঘরে বসবারই—
বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে কিন্তু মাঠে চান খাঁ নেই
বাম কানে এই কথা বললে বাতিল হবে ডান কানেই!’

বলল দাদু, ‘চিন্তা কী রে, সামনে যে ম্যাচ কলকাতার
দূরের দোলা-য় উঠিসনি তো ইডেন গিয়ে দোল খা তার।’
ছোট্কা’ ডেকে কন আমাকে, ‘ভিসা আছে? কাট টিকিট’
কলকাতাতে উড়ে গেলাম ক্রিকেট পাগল আটটি কীট!

দেশের খেলা; কী আনন্দ; মন যে ভারি ফুরফুরে
গ্যালারিতে বসে বসে কণ্ঠ মেলাই সুর পুরে’
আমরা তো নই মিনমিনে ম্যাঁও কণ্ঠ কারো কর্জ নেই
ছক্কামার ও উ’কেট পেলে, গর্জি বাঘের গর্জনেই।

খেলা শেষে ঠায় দাঁড়িয়ে ছোট্কা’ আমার চান খাঁ তার
ধীর আঙুলে খুলে’ পড়েন দেশপ্রেমের এক গান খাতার
হঠাৎ দেখি অশ্রু যে তার তুলছে চোখে রোল ভারী
ঊর্ধ্বে চেয়ে বলেন, ‘বিধি, একটা কথা বলবারই—
এই জনমে দেখব বলে ভাগ্যে যদিও কাপ না দেস
হৃদয় তবু গেয়েই যাবে : ‘আপনা মানুষ, আপনা দেশ।’

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor