জলের গানের প্রতিটি আয়োজন আমাদের নিয়ে যায় প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। দেখিয়ে দেয় শিকড় আর সম্পর্কের যোগসূত্রটা কোথায়। সাত বছর পর দুই বন্ধু রাহুল আনন্দ ও কনক আদিত্যকে পেয়েছি একই ছাতার নিচে। সুরের পথে কীভাবে আবার তাদের সাক্ষাৎ হলো, সে গল্প নিয়ে এ আয়োজন।
ছবি আঁকতে সবসময় রং, তুলি, ক্যানভাস লাগে না। কথা-সুরের মোড়কেও অনেক দৃশ্য বন্দি করে রাখা যায়। তার অনেক উদাহরণ তৈরি করে রেখেছে জলের গান। তাই আমরা যখন এ দলের কোনো গান শুনি, তখনও আপনাআপনি মনের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় কিছু দৃশ্য। যেখানে থাকে মাটিঘেঁষা মানুষ, ফুল, পাখি, বৃক্ষ, পাতা থেকে শুরু করে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য। একই সঙ্গে গানে পাওয়া যায় সোঁদামাটির ঘ্রাণ। উঠে আসে মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা কথামালা।
এভাবে দশকের পর দশক জলের গান তাদের অভিনব আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রোতাকে নিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। একইভাবে দেখিয়ে দিয়েছে শিকড় আর সম্পর্কের যোগসূত্র কোথায়। তাই আমরা অবাক হইনি দীর্ঘ সাত বছর পর এ গানের দলের দুই সদস্য রাহুল আনন্দ ও কনক আদিত্যকে এক ছাতার নিচে দেখে। না, কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয়; নিজের প্রয়োজনেই সাত বছর আগে কনক জলের গান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আবার ফিরে এলেন বন্ধুত্ব, সুরের টান ও দলের প্রয়োজনে। এটা হওয়ারই ছিল, যার আভাস সাত বছর আগে দিয়ে রেখেছিলেন রাহুল আনন্দ। বলেছিলেন, ‘আমরা যারা একসঙ্গে পথ পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি, বুনে চলেছি কথা-সুরের দৃশ্যমালা; তারা সবাই জলের গানের চিরকালীন সঙ্গী। জানি, নানা কারণে কোনো না কোনো সময় কেউ না কেউ দল ছেড়ে যাবে। তারপরও তাদের কারও জন্যই জলের গানের দুয়ার রুদ্ধ হবে না কখনও। যারা যাবে তারা ফিরে আসতে পারে, কেউ কেউ আসবেও– এই বিশ্বাস থেকেই দুয়ার খুলে রেখেছে জলের গান। যে যখনই ফিরে আসতে চাইবে, তখনই তাকে স্বাগত জানানো হবে।’
এ যে শুধু কথার কথা নয়, তার প্রমাণ সাত বছর পরেও পাওয়া গেল। আবারও জলের গানের সঙ্গে মঞ্চে উঠে গাইতে দেখা গেল কনক আদিত্যকে। সেই সুবাদে মুখের হাসি প্রসারিত হয়েছে অনুরাগীদের, যারা আবারও দুই বন্ধু রাহুল-কনককে একসঙ্গে এ প্ল্যাটফর্মে দেখার আশায় ছিলেন। ক’দিন আগে যখন জলের গানের একক কনসার্টে কনক আদিত্যের দেখা মিলল, ঠিক তখনই জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই দীর্ঘ সময় কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? কনক হেসে বলেন, ‘বরাবর যা করি, তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। গান আর ছবি– এই দুটোই সময় পেরোনোর বড় অনুষঙ্গ। হয় কথা-সুরে ছবি আঁকি, নয়তো ছবির মধ্য দিয়ে সুর রচনা করে যাই। তাই আবার যখন দল বেঁধে গাইতে ইচ্ছে হলো, ফিরে এলাম জলের গানে। এটা সেই প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আমরা নিজের মতো করে কাজ করি। তাই বন্ধুত্বের আহ্বান এড়ানো যায়নি কখনও।’
এ তো গেল কনকের ফিরে আসার গল্প। কিন্তু কনক ফিরে আসার পর রাহুল কেন গাইছেন না, তাহলে তিনি দল ছেড়ে গেছেন? সে প্রশ্ন করতেই জলের গানের আরেক সদস্য রানা সরোয়ার বলেন, ‘মনে হয় না এ প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলার আছে। কারণ অনেকেই জানেন ৫ আগস্টের পর রাহুল আনন্দের জীবনে কী ঘটনা ঘটে গেছে। বাড়ি এবং নিজ হাতে তৈরি সব বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এবং নানামুখী কথার যুদ্ধে তিনি কিছুটা বিপর্যস্ত। যদিও ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়িটা তাঁর নিজের নয়; ভাড়া থাকতেন। তারপরও একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। এ সময় যে বন্ধুর পাশে থাকার কথা, সেই কনক আদিত্য আবারও ফিরে এসেছেন আমাদের মাঝে। জলের গানের তরঙ্গ যেন বহমান থাকে, সে লক্ষ্যেই তাঁর এই আগমন।’ তবু অনেকের মনে যে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে কি রাহুল আনন্দ তাঁর গানের দলে ফিরবেন না?
সেটা জানতে চাইলে শিল্পীর উত্তরটা ছিল, ‘হারিয়ে তো যাইনি, তাই ফিরেও আসব যথাসময়ে।’ জলের গানের অন্য সদস্যদের কাছে জানা গেল, রাহুল এখন ব্যস্ত নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা নিয়ে। সবকিছু গুছিয়েই ফিরে আসবেন তাদের মাঝে। তখন আবার দেখা যাবে হাত হাত রেখে রাহুল-কনক জুটিকে মঞ্চে উঠতে। তাদের সহযোদ্ধা হবেন রানা সরোয়ার, মল্লিক ঐশ্বর্য, মাসুম, ফারহান, অর্জুন ও ইলিমা। যাদের সঙ্গী করে একে একে গাইবেন তিনটি অ্যালবামের ‘এখন কথা হলো’, ‘এমন যদি হতো’, ‘ও ঝরা পাতা’, ‘বকুল ফুল’, ‘পাখির গান’, ‘ফুলচাষির গান’, ‘পাতার গান’ ‘দূরে থাকা মেঘ’, ‘গীতল চিঠি’, ‘পাখির গান’, ‘ফুলকুমারীর বিয়ে’, ‘পরের জায়গা পরের জমি’, ‘ডানা ভাঙা পাখির গান’, ‘রসিক যে জন’সহ জনপ্রিয় এবং আনকোরা গানগুলো।
Publisher & Editor