সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

গণমাধ্যমে সহিংসতার সংবাদ আরও সংবেদনশীল করার আহ্বান মহিলা পরিষদের

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ১৭৫

মূলধারার গণমাধ্যমে সহিংসতার সংবাদ প্রকাশে আরও দৃশ্যমান ও সংবেদনশীল করার আহ্বান করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একইসঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা, স্বাধীনভাবে চলাচলে বাধা, নিরাপত্তাহীনতা, বিদ্বেষমূলক আচরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) বিকেলে আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারীর মানবাধিকার : বাস্তবতা ও করণীয়’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল প্রবন্ধ (সংযুক্ত) উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।

গোলটেবিলে বৈঠকে বক্তারা সমাজের যৌনকর্মী এবং ভিন্ন লিঙ্গ পরিচিতির মানুষের উপর দলভিত্তিক উচ্ছৃঙ্খল আচরণের প্রতিবাদ জানান। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সময়ের পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করে নারী আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ ও বেগবান করার আহ্বান জানায়।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তৃণমূলের নারী, পেশাজীবী নারী, তরুণী ও বিপ্লবী নারীসহ সব শ্রেণির নারীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে বিস্তৃত করতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করছে। ১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে, সিডও সনদে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। নারী সমাজ অধিকারের বিষয়ে যত সচেতন হয়ে উঠছে, পুরুষ তত সহিংস হয়ে উঠছে। জাতীয় পর্যায়ের অগ্রগতিতে নারীর অবদান থাকলেও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, নারীকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। এজন্য পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। এখানে পুরুষকে মানবিক হওয়া দরকার। এখন যে নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরায় শঙ্কা ও আতংক তৈরি হয়েছে তা দূর করার পরিকল্পনা নিতে হবে। সংসদে এক তৃতীয়াংশ সরাসরি ভোটে নারীদের আসতে হবে এবং বৈষম্যমূলক আইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রাজনীতিতে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় নারীদের রাজনীতিতে ভূমিকা তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না। দীর্ঘসময় নারী আন্দোলনের পর নারীরা শিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে এলেও পাহাড়ি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরা এখনো প্রান্তিক অবস্থায় এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এসব বিষয়ে নানা আলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

তারা আরও বলেন, বর্তমান সময়ে এসে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বের নারীদের একত্রিত হওয়া, নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতির সঠিক জাতীয় গুণগত ও সংখ্যাগত উপাত্ত থাকা। বাল্যবিয়ে যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন করেছে এ বিষয়টি অন্যান্য দেশ স্বীকার করলেও বাংলাদেশ স্বীকার করেনি। বাল্যবিয়ে ও সহিংসতা বন্ধ করে নারীদের শিক্ষায় সুযোগ তৈরিসহ জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে নীতিগত কর্মকৌশলের পরিবর্তন করতে হবে।

এছাড়া অংশীদারিত্ব ও সমঅধিকারের প্রতি লক্ষ রাখা, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, আদিবাসী নারীদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র গণমাধ্যমে আরও দৃশ্যমান হওয়া; নারীর পোশাকে ও চলাফেরায় স্বাধীনতা থাকা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাজের স্বাধীনতা ও চলাফেরায় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জোরালো অ্যাডভোকেসি করা। বক্তারা মব জাস্টিস দূর করতে প্রতিবাদের ভাষা আরও জোরালো করার আহ্বান জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মানবাধিকার কর্মী শীপা হাফিজা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কনসালটেন্ট ও বহ্নিশিখার স্ট্রেনথদেনিং ইন্টার জেনারেশনাল উইমেন্স মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রোগ্রামের ডিরেক্টর সামিনা ইয়াসমিন, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তানভির ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আদিবাসী শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রার সংগঠক ইসাবা শুহরাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, একশন এইডের ম্যানেজার (উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুয়িটি) মরিয়ম নেসা।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor