কিংবদন্তি অভিনেতা ফারুকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ফরিদা আক্তার ববিতা ।
দেখতে দেখতে চলে গেল সবার প্রিয় অভিনেতা নায়ক ফারুকবিহীন একটি বছর। মনে হয়, এইতো সেদিন তিনি চলে গেলেন। অথচ একটি বছর পার হলো। স্মৃতিতে অম্লান আমাদের এই কিংবদন্তি। আমাদের সুদীর্ঘকালের বন্ধু, প্রিয় নায়ক ফারুক আর পৃথিবীতে নেই– এটি বিশ্বাস করে ওঠা আসলেই কষ্টকর। নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় তাঁর সঙ্গে ছিল আমার প্রথম অভিনয়। সিনেমায় ফারুক ভাইয়ের ছোট একটি চরিত্র ছিল। সেটেই হয়েছিল দু’জনের পরিচয়। প্রথমে ততটা চেনাজানা ও বন্ধুত্ব না থাকলেও চলচ্চিত্রে কাজের সুবাদে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর ৪০টির মতো সিনেমায় তাঁর বিপরীতে কাজ করেছি। বেশিরভাগ ছবিই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘মিয়াভাই’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘এতিম’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’সহ অসংখ্য সুপারহিট সিনেমায় দর্শক ববিতা-ফারুক জুটি দেখেছেন।
মনে পড়ে, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছিল মানিকগঞ্জের ফকিরবাড়ি, নবগ্রাম, ঝিটকা এলাকার নদীর পাড়ে। খুব শীতের মধ্যে শুটিং করতে হতো। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন আমাদের শট আসবে। কত শত স্মৃতি! সবই মাঝে মাঝে মনে পড়ে। ওই সিনেমায় তাঁর অভিনীত মিলন চরিত্রটি দর্শক আজও মনে রেখেছে। ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের সিনেমাই বেশি করেছি। গ্রামভিত্তিক সিনেমায় তিনি ছিলেন অনবদ্য।
১৯৭৬ সালে ‘নয়নমনি’ এ দেশের প্রেমের সিনেমার মধ্যে ধ্রুপদি হয়ে ওঠে। এ সিনেমার পর ফারুক-ববিতা জুটি মানেই বিশেষ কিছু হয়ে ওঠে। মাসের পর মাস সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে। কয়েক যুগ পর আজও এ সিনেমার কথা মানুষ মনে করেন, কালজয়ী বোধহয় একেই বলে! আমাদের অভিনীত সিনেমার প্রেম, বিরহ আজও দর্শকহৃদয়ে মুগ্ধতাভরা হাহাকার জন্ম দেয়। ফারুক ভাইয়ের নিজের প্রডাকশনের সিনেমাও করেছি। তাঁকে নিয়ে আমার একটা আফসোস আছে। তাঁর মরদেহ যখন দেশে এলো, আমি তখন কানাডায় যাচ্ছি। এ কারণে শেষ দেখাটাও তাঁর সঙ্গে হলো না। এটি আমার জন্য কষ্টের। অভিনেতা ফারুকের অভিনয়গুণ সম্পর্কে সবাই জানেন। এ নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না। নায়ক ফারুকের ব্যক্তিত্ব ছিল অনুসরণীয়। ব্যক্তি ফারুককে বাইরে থেকে দেখলে মনে হতো খুব রাগী, জেদি, ভয়ংকর। আসলে তিনি মোটেও সেরকম ছিলেন না। কোনো কোনো সময় খুব রেগে কথা বলতেন, তাই বলে অনেকেই ভাবতেন তিনি একজন রাগী মানুষ। নরম মনের মানুষটি আমাদের সব শিল্পীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। সবারই একদিন চলে যেতে হবে। আজ অথবা কাল।
ফারুক ভাই যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন– এটি এখনও বিশ্বাসই হয় না।সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা চলাকালীন শেষের দিকে মনে হচ্ছিল তিনি বোধহয় সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন। সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে চলে গেলেন তিনি!
কিছুদিন আগে ফারুক ভাইয়ের ছেলের বিয়ে হলো। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সবাই আছেনঅথচ ফারুক ভাই নেই! তাঁর কথা খুব মনে পড়ছিল। খুশির মুহূর্তেও চোখ ভিজে গিয়েছিল। চলচ্চিত্রের প্রিয়জন নায়ক ফারুক এমন একটি নাম অভিনয়জগতে, যে নামের সঙ্গে একটি বর্ণাঢ্য অধ্যায় জড়িত। আমরা যেন তাঁকে ভুলে না যাই। পরপারে ভালো থাকুন তিনি– সৃষ্টিকর্তার কাছে এ দোয়াই চাইছি।
Publisher & Editor