ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট।
তবে এরপরও হামাসকে নির্মূল বা পরাজিত কোনোটিই করতে পারেনি ইসরায়েল। আর তাই ইসরায়েল গাজায় ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ বাইডেন প্রশাসনেই।
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, গাজায় বিজয়ের তত্ত্ব কি তা বুঝতেও কার্যত সংগ্রাম করছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি উপত্যকা গাজায় হামাসকে পরাজিত করে ইসরায়েল ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জন করবে বলে তেমন কোনো সম্ভাবনা বাইডেন প্রশাসন দেখছে না বলে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল সোমবার জানিয়েছেন।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসনের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন, তারপরও ক্যাম্পবেলের এই মন্তব্য বাইডেন প্রশাসন তথা শীর্ষস্থানীয় কোনো মার্কিন কর্মকর্তার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার স্বীকারোক্তি যে, ইসরায়েলের বর্তমান সামরিক কৌশল এমন ফলাফল আনবে না যে লক্ষ্যে তারা লড়াই করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে ন্যাটো ইয়ুথ সামিটে ক্যাম্পবেল বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে, আমরা বিজয়ের তত্ত্ব কি তা নিয়ে সংগ্রাম করছি। কখনও কখনও আমরা যখন ইসরায়েলি নেতাদের কাছ থেকে শুনি, তারা বেশিরভাগ সময়ই... যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক বিজয়, সম্পূর্ণ বিজয়ের ধারণা সম্পর্কে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি না... আমরা বিশ্বাস করি, তেমন কিছুর (সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন) সম্ভাবনা আছে বা তেমন কোনও কিছু সম্ভব। এবং এটি অনেকটা সেই পরিস্থিতির মতোই দেখায় যেখানে আমরা ৯/১১-এর পরে (আফগানিস্তান এবং ইরাকে) নিজেদেরকে পেয়েছি।’
রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার হামাসের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরলস আক্রমণে ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বর্বর ইসরায়েলি আগ্রাসনে ঘনবসতিপূর্ণ ক্ষুদ্র এই ভূখণ্ডটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া ক্যাম্পবেল এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন যখন গাজা উপত্যকার দক্ষিণতম শহর রাফাতে বড় ধরনের কোনও সামরিক আক্রমণ না করার জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করছে ওয়াশিংটন। মূলত ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এই শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান এবং ইরাকে আক্রমণের পর যে পুনরাবৃত্তিমূলক বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল, গাজার পরিস্থিতির সাথে সেটির তুলনা করে ক্যাম্পবেল বলেন, (এই ধরনের সংকটের) রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা আরও বেশি হওয়া উচিত... অনেক দেশ এমন একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে চায় যেখানে ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে আরও সম্মান করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না, এটি বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।
Publisher & Editor