সাম্প্রতিক সময়ের যেকোন ফোবানা আয়োজনের সাফল্যকে পেছনে ফেলে সাফল্যের নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে ৩৭তম ডালাস ফোবানা।
৩৭ তম সফল ফোবানার মিলন মেলা শেষে ৩৮ তম ওয়াশিংটন ফোবানা আাগামী বছর। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস ( বান্ট) ফোবানায় নতুন প্রাণশক্তি এনছে। দেশের মাটির টানে তিনদিনে ডালাস ফোবানায় ১৫ হাজারেরও বেশী দর্শক এসেছিলেন । বক্স অফিসে লাইন ধরে টিকেট কাটার অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখো গেছে। আরভিং সেন্টারের ৪টি ফ্লোর পরিণত হয়েছে ছোট্ট একটি 'বাংলাদেশ" । শুক্রবার পহেলা সেপ্টেম্বর বিকেল ৩ টা থেকে রোববার রাত আড়াই পর্যন্ত আরভিং সেন্টার ছিল বাংলাদেশীদের পদচারণায় মুখরিত।
শুক্রবার উদ্বোধনী দিনে ফোবানায় উপস্থিত দুই হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ডালাসের আরভিং কনভেশন সেন্টারে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ, আমেরিকান ও কানাডার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ৩৭ তম ফোবানার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা হয়। দিবা সাহা, সাদমান ফারিব, ফারহানাজ রেজা,শারমিনা সোনিয়া, আর জে রাহী ও আবীর আলমগিরের যৌথ উপস্থাপনায় ফোবানার উদ্ভোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসাবে ইরভিং সিটির মেয়র রক স্টাফার বলেন, ফোবানা বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে সেতু তৈরী করবে। বাংলাদেশীরা আমেরিকা বিনির্মাণে ভুমিকা রাখছেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্যে রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রো ভিসি ডক্টর বেনু রায়, ঢাকার ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা সবুর খান, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউশন এর পরিচালক হাকিম আরিফ ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান আবু হানিফ।
উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে রাখেন, ফোবাবার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ রব চৌধুরী, ফোবানার চেয়ারম্যান ড. এহসান হিরো, ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী নাহিদুল খান সাহেল, হোস্ট কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী সামসুদ দোহা সাগর ও ৩৭ তম ফোবানার কনভেনর হাসনত মোবিন।
ফোবানার মুল উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের পুর্বে সন্ধ্যা ৬ টায় ব্লাক টাই ডিনার এর আয়োজন করা হয়। সেখানে ২০০ শত গেস্ট অংশগ্রহণ করেন।
ডালাস ফোবানার দ্বিতীয় দিন শনিবার লাস কলিনাসের আরভিং কনভেনশন সেন্টারের ছিল ৫ হাজার দর্শকের উপচে পড়া ভীড়। মনে হচ্ছিল ডালাসের সকল বাংলাদেশীরা চলে এসেছিলেন।
শনিবার সকালে ছিল অনেক গুলো সেমিনার, কাব্যজলসা, বই মেলা, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন,ফোবানার ইসি মিটিং ও মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
কাব্য জলসার ষ্টেজ টা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। তাসকীর আলী খান, একজন সৃজনশীল মানুষ। দেয়াল পত্রিকা চয়নিকাও তিনি উপহার দিলেন। একটি অসাধারন
স্টেজ বানিয়ে পুরো বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংষ্কৃতি উপস্থান করেছেন, কাব্য জলসায় তাকে সহযোগিতা করেন ফারহানাজ রেজা, রুমি সরকার, কাজী হাসান।
১৬ টি স্টেটের কম বেশী হাজার খানেক বাংলাদেশী প্রবাসী সপরিবারে ডালাসের ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করে তিন দিনের ফোবানা উপভোগ করেছেন।
সকাল ১০ টায় ফোবানার ইসি মিটিং এর পর উত্তর আমেরিকার কবিদের কবিতা দিয়ে তৈরী দেয়ালিকা " চয়নিকা " উন্মোচন করেন ফোবানা এক্জিকিউটিভ সেক্রেটারি নাহিদুল খান সাহেল,ফোবানার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব রহিম, ফোবানার ট্রেজারার ডা. মুহাম্মদ আলী মানিক, সাংবাদিক জুয়েল সাদত, লেখক কাজী হাসান সহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দ্বিতীয় দিন শনিবার ২ টায় শুরু হয় ফোবানার অন্যতম কাব্য জলসা, ছিল মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ সংগ্রহের প্রদর্শনী ও বই মেলা। কাব্য জলসায় দুই দিনেই ছিলো উত্তর আমেরিকার কবি সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি, বাংলা সাহিত্যের ভাষা নিয়ে আনিস আহমদের আলোচনা ও সলো গান।
শনি ও রোববার ২ দিনই কাব্য জলসা ও বই মেলা প্রাঙ্গণে ছিল সাহিত্যিকদের ভীড় ও কবিতা আবৃত্তি । বই মেলায় উত্তর আমেরিকার লেখকদের ভাল বই বিক্রি হয় বলে জানান, বই মেলার আহবায়ক ফরহাদ হোসেন।
প্রথম ফোবানা বই মেলায় বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সাংবাদিক জুয়েল সাদত এর বই "জুয়েল সাদতের টাইম লাইন" এর মোড়ক উন্মোচন। মোড়ক উন্মোচন করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রো ভিসি ডক্টর বেনু রায়। ডক্টর বেনু রায় সামছুদ্দিন মাহমুদের মার্কিন মুলুকে, ডাক্তার সেলিনা শাহীনের "বোধের চৌকাঠ", ডাক্তার মুহাম্মদ আলী মানিকের "ওদের অপপ্রচার আমাদের জবাব" এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
শনিবার ছিল ফোবানায় বাধভাঙ্গা প্রবাসীদের উপস্থিতি। হাজার হাজার প্রবাসীদের আগমনে আরভিং সেন্টারে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বাহিরে খাবারের স্টলে ও ভেন্ডরদের স্টলে ছিল উপচেপড়া ভীড়। চার তলায় কাপড়ের স্টলগুলোতে ও ভীড়। খাবারের মান ও দাম ছিল সহনীয়। সবাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া গেছে। মেম্বার সেক্রেটারী সামসুদ দোহা সাগর জানান, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ফুড ভেন্ডরদের সাথে একাধিকবার বসে নিশ্চিত করেছি খাবারের মুল্য। ৩৭ তম ফোবানার গ্লান্ড স্পন্সর ইয়াম্মী বার্গারের মালিক জনাব হারুন, প্রতিদিন সকাল বেলা সুলভ মুল্য ব্রেকফাস্ট সহ লাঞ্চ ডিনার পরিবেশন করেছেন নাম মাত্র মুল্য। ফোবানায় আগত অনেকেই বলেছেন, এবারই দেখলাম ফুড ভেন্ডরদের আন্তরিকতা ও মানসম্মত ফুড।
তৃতীয় দিনেও ছিল বেশ কয়েকটি সেমিনার। ওমেন এম্পায়ার, ফোবানা ইয়ুথ সেমিনার, ফোবানা ট্যালেন্ট হান্ট ছিল অন্যতম আকর্ষন। ফোবানা ট্যালেন্ট হান্টটা জমে উঠেছিল টান টান উত্তেজনায়। সবাই অনেক ভাল করেছে। নতুন প্রজন্ম কতটা দেশপ্রেমী বুঝা গেল। এক কথায় অনন্য। উইথ ফোরাম সেশনটা ছিল কানায় কানায় পুর্ন। কোন সেমিনারে এত ইয়াং জড়ো হতে পারে অনেকের ধারনা ছিল না। ইউথ ফোরাম এর লম্বা সেশনটা অনেক কিছু শিখেছেন নতুন প্রজন্ম।
এছাড়াও দু’দিনের অনুষ্ঠানে ছিলো নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে চমৎকার পরিবেশনা। উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি ব্যাবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ‘বিজনেস নেটওয়ার্ক লাঞ্চ, অভিবাসন সংক্রান্ত আইন নিয়ে আলোচনা, বাংলাদেশ থেকে আগত জনপ্রিয় শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা, প্রবাসী বাঙালি সমাজে অবদান রক্ষাকারী বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদানসহ আকর্ষণীয় আয়োজন।
মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের মুল্যায়ন করা হয়, বর্নমালার সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজুর রহমান, প্রথম আলোর জুয়েল সাদত, এন টিভির পুলক মাহমুদ ও চ্যানেল আইয়ের রাশেদ আহমদ কে আউটস্ট্যান্ডিং এওয়ার্ড দেয়া হয়।
আজীবন সম্মামনা লাভ করেন এন টিভির সাঈদ হোসেন।
শনি ও রবিবার মূলমঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মিতালী মুখার্জী , ইমরান, কনা, রিজিয়া পারভীন, শাহনাজ বেলী, মুজা, নির্ঝর, রোমেল আহমদ,সোনিয়া হাসান, রুপালী রুশনী, আরজিন কামাল, , শেখ লেমন, আদিবা মোবিন ও মোমোসহ প্রায় ৫০জন শিল্পী। দ্বিতীয় দিন রাত ১ টায় নতুন প্রজন্মের ক্রাশ মোজা উঠেন মঞ্চে, পুরো ওডিয়েন্স অন্যরকম হয়ে যায়, কয়েক শত ইয়াং অডিয়েন্স মঞ্চের সামনে চলে আসে। মোজা গান ও লিপসিং করেন। মোজা'র অডিয়েন্স অন্যরকম, সেটা অনেকেই জানতেন না।
মোজা ১ ঘন্টা মুগ্ধ করে রাখেন ৫ হাজার শ্রোতাকে। শনি বারে এরকম শেষ শিল্পী ছিলেন শাফিন আহমদ, ১৫ মিনিটে তিনি মাতিয়েছিলেন। রোববার ইমরানও মাতিয়ে রাখেন রাত দেড়টা পর্যন্ত।
ছিল অনবদ্য ফ্যাশন শো, যা পুরো বছরের নানা দিবসকে রিপ্রেজেন্ট করে ও একটি ৭০ দশক থেকে ২০২০ সালের গানের পরিবেশনা ও নাচ।
ফোবান তিনদিন বাংলাদেশ কনসুলেট এর সেবা নিতেও ছিল প্রবাসীদের ভিড়।
আমেরিকার ১৮ স্টেটের ২৯ টি শহর ও কানাডা থেকে মোট ৬২টি সংগঠনের কয়েক হাজার সংগঠক অংশগ্রহন করেছিলেন সম্মেলনে। অতীতের সম্মেলন গুলোতে দেখা গেছে সাধারনত মুল মঞ্চের অনুষ্ঠান গুলোতেই দর্শকদের উপস্থিতি এবং আকর্ষনটা বেশি থাকে, কিন্তু এবারের সম্মেলনে মুল মঞ্চের অনুষ্ঠান ছাড়াও কনভেনশন হলের ৪টি ফ্লোরেই নানান অনুষ্ঠান গুলিতে সারাদিন ধরেই উপচে পরা দর্শকদের উপস্থিতি ছিলো চোখে দেখার মত। ১ লাখ বর্গফুট এর বিশাল ইরভিং কনভেশন সেন্টারের পুরোটাই ব্যবহার করেছে বান্ট এর ৩৭ তম ফোবানা। ফোবানা এবার ইতিহাস তৈরী করেছে।
কনভেনর হাসমত মোবিন, এমন একজন ব্যাক্তিত্ব যিনি সকল অতিথি, ভেন্ডর,শিল্পী - কলাকৌশলী সবার খবর নেন সব সময়। সফল ৩৭ তম ফোবানার কনভেনর হাসমত মোবিন জানান, আমাদের চেস্টার কোন ঘাটতি ছিল না। আমরা সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম , সবাই সাড়া দিয়েছেন। সবার সহযোগীতায় ডালাস ফোবানা সফল।
মেম্বার সেক্রেটারী সামসুদ দোহা সাগর, জানান, এটা একটা টীম ওয়ার্ক। সবাই স্বাধীন ভাবে আন্তরিক ভাবে কাজ করেছিলেন বলেই, আমরা ইতিহাস তৈরী করলাম।
৩৮ তম ওয়াশিংটন ( বাগডিসি) ফোবানার কনভেনর রুকশানা পারভীন বলেন, আমরা ডালাস এর প্রতিযোগীতা করব না, একেক স্টেটের ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন। আমরা আমাদের শহরের উপযোগী মানসম্পন্ন ফোবানা করব, সবার সহযোগীতায়। ৩৯ তম ফোবানা ভোটাভুটির মাধ্যমে অর্জন করে
(২০২৫ ) আটলান্টার বাংলাধারা সংগঠন। নাহিদুল খান সাহেলকে আহবায়ক ও মাহবুবর রহমান ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব মনোনীত করা হয়েছে বাংলাধারায় ।
Publisher & Editor