মাসুম মাহমুদ
পাশাপাশি গাছ দুটির কোলজুড়ে ফুটফুটে দুটি ফুল এসেছে। একটি সাদা গোলাপ, অন্যটি লাল গোলাপ। দুজনের দেখা হতেই ওরা বন্ধু হয়ে গেল। তারপর কত আলাপ! কেমন করে একজন লাল, অন্যজন সাদা, কার কত গন্ধ, কে কী কাজ করে এসব। আলাপে আলাপে বেলা পেরিয়ে যখন একটু ফুরসত নেবে, দেখে একটি প্রজাপতি ও একটি ফড়িং এসে সম্মুখে খেলা করছে। প্রজাপতি আগেও এসেছিল মনে পড়তেই লাল গোলাপ বলল, ‘রঙিন প্রজাপতিটা এখনই আমার গন্ধ শুঁকতে আসবে।’ বলতে বলতে প্রজাপতি সত্যি এসে লাল গোলাপের গন্ধ শুঁকে গেল। এত সুন্দর দৃশ্য দেখে সাদা গোলাপ তো অবাক! বলল, ‘কেমন করে বুঝেছিলে প্রজাপতি তোমার গন্ধ শুঁকতে আসবে!’
‘মন বলছিল।
মনের যত্ন নিলে সে অনেক কিছু আগাম বলে দিতে পারে।’ এইটুকু বলে লাল গোলাপ হাসে।
‘তোমার মনকে একটু বলে দেখবে বর্ণিল ডানার ওই ফড়িংটা আমার গন্ধ শুঁকতে আসবে কি না?’ লাল গোলাপকে অনুরোধ করে সাদা গোলাপ বলল।
লাল গোলাপ বলল, ‘তোমার মনকে তুমি জিজ্ঞেস করো, বন্ধু।
তাহলে মন খুশি হবে।’
সাদা গোলাপ চোখ বন্ধ রেখে বিড়বিড় করে বলল, ‘ও মন, বলো দেখি ফড়িং আমার গন্ধ শুঁকতে আসবে কি আসবে না?’
সাদা গোলাপের মন বলল, ‘আলবত আসবে।’
প্রজাপতি গন্ধ শুঁকে গেল, তাই লাল গোলাপের খুব আনন্দ। এদিকে সাদা গোলাপ মন খারাপ করে আছে, ফড়িং তার গন্ধ শুঁকতে আসছেই না তাই। বন্ধুর মন খারাপ দেখে লাল গোলাপ আদুরে সুরে বলল, ‘মন খারাপ কোরো না, বন্ধু।
তুমি বিশাল আকাশে সাদা মেঘের মতো সুন্দর, তোমার মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ নিতে ফড়িং আসবেই।’
এমন সময় বাতাস বইতে শুরু করে। বাতাসের তালে তালে ফুল বন্ধুরা দুলছে। সৌরভও ছড়াচ্ছে বেশ। এত এত সৌরভ পেয়ে প্রজাপতি ও ফড়িং উড়ে এসে গাছ বন্ধুদের পাতায় বসে। দুটি সবুজ পাতার দোলনায় মুখোমুখি ফড়িং আর প্রজাপতিও বাতাসের তোড়ে দুলছে; দোল খেতে খেতে ফড়িং বলল, ‘লাল গোলাপের ঘ্রাণ তোমার ভালো লাগে, প্রজাপতি?’
প্রজাপতি বলল, ‘খুব ভালো লাগে।’
‘আর কিসের ঘ্রাণ ভালো লাগে?’
‘রোদের। মনে হয় আমায় উষ্ণ আলিঙ্গন দিতে মা রোদ হয়ে এসেছে।’
পাশ থেকে প্রজাপতির কথা শুনছিল লাল গোলাপ। তার প্রশংসা করে বলল, ‘আহা, প্রজাপতির কথায় কত মায়া! কত্তো সুন্দর করে বলল সে—মা রোদ হয়ে এসেছে।’
অমনি একটি মজার ঘটনা ঘটে গেল। ফড়িং ফুড়ুৎ করে উড়ে এসে সাদা গোলাপের গন্ধ শুঁকে ফুড়ুৎ করে গিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়ল! এত মজার ঘ্রাণ নিতে পেরে ফড়িং মহাখুশি! তাকে এমন খুশি হতে দেখে প্রজাপতি বলল, ‘এবার তুমি বলো দেখি ফড়িং বন্ধু, সাদা গোলাপের ঘ্রাণ তোমার কেমন লেগেছে?’
ফড়িং বলল, ‘অনেক ভালো লেগেছে।’
‘তোমার আর কিসের ঘ্রাণ ভালো লাগে?’
‘বৃষ্টির। মনে হয় আমায় স্নিগ্ধশীতল পরশ দিতে বাবা বৃষ্টি হয়ে এসেছে।’
ফড়িংয়ের কথা শুনে তারও প্রশংসা করে সাদা গোলাপ বলল, ‘আহা, ফড়িংয়ের কথায়ও কী ভীষণ আদর! কী দারুণ বলল সে—বাবা বৃষ্টি হয়ে এসেছে!’
তারপর প্রজাপতি ও ফড়িং চারপাশে তাকিয়ে দেখে আকাশ, পাখি, মাটি, গাছ, লতাপাতা আর অদূরে নদী। প্রকৃতির এত সুন্দর সৃষ্টি দেখতে দেখতে, নদীতে মাঝিমাল্লার বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ আর পাখিদের কিচিরমিচির শুনতে শুনতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙলে দেখে ফুল দুটি এখনো গল্প করছে। সাদা গোলাপ বলছে, ‘ফড়িং কাছে এলে খুব ভালো লাগে আমার। ওর শরীরের ঘ্রাণ পেলে মনে হয় উড়ে উড়ে বাবা এসেছে।’ সাদা গোলাপের কথা শুনে হাসতে হাসতে লাল গোলাপ বলল, ‘প্রজাপতি আমার কাছে এলেও অনেক আনন্দ হয়। প্রজাপতির শরীরের ঘ্রাণ পেলে মনে হয় উড়ে উড়ে বুঝি মা এসেছে।’
সেই কখন থেকে ঝলমলে রোদের আকাশে হঠাৎ বৃষ্টির আগমন। রোদে রোদে বৃষ্টি হতে দেখে প্রজাপতি ও ফড়িং ভাবে—আজ শিয়ালের বিয়ে। অমনি ওরা উড়তে উড়তে রোদ, বৃষ্টির কানে কানে বলল, ও বাবা, ও মা শিয়ালের বিয়ে খেতে নিয়ে যাবে আমাদের?
রোদ আর বৃষ্টি প্রিয় সন্তানদের শরীরের ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে বলল, দুষ্ট শিয়াল ওর বিয়েতে আমাদের নিমন্ত্রণ করেনি। নিমন্ত্রণ ছাড়াই বিয়ের অনুষ্ঠানে কেমন করে যাই, বলো?
রোদ, বৃষ্টির কথা শুনতে পেয়ে অদূরে গাছের ডালে বসা ফুল দুটি বলল, নিমন্ত্রণ পেয়ে সত্যি যদি বিয়ে খেতে যাও, উপহার হিসেবে আমাদের নিয়ে যেয়ো, কেমন? বলতে বলতে ওরা পৃথিবীর বুকে একরাশ ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়। ঘ্রাণে ঘ্রাণে ঘুম ভাঙে এতক্ষণ ধরে রোদ, বৃষ্টি, ফুল, প্রাণীদের স্বপ্নে দেখা ইফার।
Publisher & Editor